যোগ্যতা: বাংলাদেশে এবং দেশের বাইরে এ বিষয়ে বিভিন্ন ডিগ্রী রয়েছে। তবে কোর্স বা অনলাইন কোর্স এর মাধ্যমে শেখা যেতে পারে।
সুবিধা: আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এবিষয় সার্টিফিকেটের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা এবং ধৈর্য্য-সাধনা-চেষ্টা ও চিন্তাশক্তির।
আয়: নতুন অ্যানিমেটর হলেও মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার। কিছুটা সময় পর ১ লাখ টাকা ।
সাজেশন: চাকরির পাশাপাশি অ্যানিমেটররা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বেশি টাকা আয় করছেন। এই পেশাটা আরামদায়ক, উপভোগ্য, সৃজনশীল
অ্যানিমেশন সাধারণ একটি ধারণা আমাদের সবার মাঝেই রয়েছে। এক কথায় অবাস্তবকে বাস্তবে রুপান্তর কার। বিশেষ করে হলিউডের কিছু চলচ্চিত্র বিষয়টি আমাদের কাছে বেশ ভাল ভাবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। কয়েকটি অ্যানিমেশন নির্ভর চলচ্চিত্রের নাম যদি বলি ‘কুংফু পান্ডা’, ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’, ‘ফ্রোজেন’, ‘টয় স্টোরি’, ‘শ্রেক’, ‘হাউ টু ট্রেন ইউর ড্রাগন’, ‘ওয়ান্টেড’, ‘অ্যাভেঞ্জার’, ‘আয়রন ম্যান’, ‘স্পাইডারম্যান’, ‘অ্যাভাটর’সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রের নাম উঠে আসে। আপনি কি জানেন ‘কুংফু পান্ডা’, ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ ‘শ্রেক’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রের প্রধান অ্যানিমেটর বাংলাদেশি! অবাক হওয়ার কিছুই নেই, বাংলাদেশের নাফিস বিন যাফর এসব চলচ্চিত্রে অ্যানিমেশনের জন্য বিশ্বে চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় সম্মাননা অস্কার একাডেমিক অ্যাওয়ার্ডও অর্জন করেছেন। তাহলে ভয় কীসের? অ্যানিমেশনে আপনিও আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
হলিউডি চলচ্চিত্রের বাইরেও যদি অ্যানিমেশনের নাম বলা হয় তাহলে অনায়াসেই টারজান, আলাদিন, টম অ্যান্ড জেরি, পাপাই, থান্ডার ক্যাটস, মিনা কার্টুনের নাম চলে আসবে। এর সবই অ্যানিমেশনের ফসল। অ্যানিমেশনের মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের দাতা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম সারাবিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন। এক্ষেত্রে বলা যায় মিনা কার্টুনের কথা। শুধু চলচ্চিত্রই নয়, গেমসগুলোও এখন অ্যানিমেশন নির্ভর। বিজ্ঞাপন, কার্টুন, লোগো থেকে শুরু করে ভিজ্যুয়াল প্রায় সব কাজই এখন অ্যানিমেশন নির্ভর হয়ে উঠেছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে এর চাহিদা সবে শুরু হয়েছে মাত্র।
বর্তমানে অনেক তরুণ-তরুণীই অ্যানিমেশনে ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন। অনেকে অ্যানিমেশন নিয়ে কাজও করছেন। তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন সেক্টরের মধ্যে অন্যতম একটি জনপ্রিয় সেক্টর অ্যানিমেশন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এসব সার্টিফিকেটের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সৃজনশীল বুদ্ধমত্তা এবং ধৈর্য-সাধনা-চেষ্টা ও চিন্তাশক্তির। তাহলে আমাদের দেশে একজন অ্যানিমেটর হিসেবে কোনো প্রকার সার্টিফিকেট ছাড়াই এই পেশায় অনেক দূর যাওয়া সম্ভব। সিনেমা ইন্ডাট্রিজ, টেলিভিশন চ্যানেল, নিউজ এজেন্সি, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, এনজিওতে চাকরি করতে পারবেন। এছাড়া দেশে বসে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
অ্যানিমেশন হচ্ছে স্থির চিত্রের একটি ক্রম যেগুলোকে বিশেষ প্রক্রিয়া লক্ষ্য করলে জীবন্ত ও সচল বলে মনে হয়। অ্যানিমেশন তৈরি করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যেমন—অ্যানালগ পদ্ধতিতে ক্রম-সচল বই, সচল ছবি, ভিডিও টেপ আর ডিজিটাল পদ্ধতিতে জিআইএফ, ফ্ল্যাশ বা ডিজিটাল ভিডিও। এটি প্রদর্শনের জন্য ক্যামেরা, কম্পিউটার বা প্রজেক্টর ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
পেশা হিসেবে অ্যানিমেটরের চাহিদা বিশ্বব্যাপী। দেশেও এর চাহিদা কোন অংশে কম নয়। দেশে চ্যানেলের সংখ্যা বাড়তে থাকায় চ্যানেলগুলোতেও অ্যানিমেটরের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। তাই অ্যানিমেশন শেখানোর জন্য আমাদের দেশে বহু প্রতিষ্ঠানেরও বারছে দিনে দিনে। মোটামুটি দক্ষ অ্যানিমেটরের পক্ষে দেশে বসেই মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব অনায়াসেই। একেবারে নতুন অ্যানিমেটর হলেও মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব আমাদের বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং কাজের সুযোগতো রয়েছেই। এই সময়ে চাকরির পাশাপাশি অ্যানিমেটররা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বেশি টাকা আয় করছেন। এই পেশাটা আরামদায়ক, উপভোগ্য, সৃজনশীল হওয়ার পাশাপাশি সম্মানজনকও বটে।
অ্যানিমেশনের প্রধান কয়েকটি সফটওয়্যারের মধ্যে হলো থ্রিডি ম্যাক্স, মায়া, আফটার ইফেক্টস, অ্যানাইম স্টুডিও, মোশন স্টুডিও থ্রিডি, টুন-বুম স্টুডিও, অ্যানিমেশনিশ ইত্যাদি। তবে আগে শিখতে হবে এবং অনুশীলন করতে হবে প্রচুর ।
সৃজনশীলতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ সম্ভব অ্যানিমেশনের মাধ্যমে। কাজেই সৃজনশীলতা চর্চার কথাটা মাথায় রেখেই আপনাকে অ্যানিমেশনের জগতে প্রবেশ করতে হবে। কে জানে, আপনিও হয়তো একদিন মিকি মাউসের মতো কোনো চরিত্র তৈরি করে ফেলবেন।