journalism and media studies

সংবাদ লিখবেন কিভাবে । রিপোর্টিং স্কিপ্ট রাইটিং

একজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহের পর সকল তথ্য দিয়ে একটি স্কিপ্ট লিখে ফেলেন এবং সেটাই মুল সংবাদের কাঠামো । এর আগেও এই বিষয়ে কিছুটা আলাপ করেছি, আজকে আমরা দেখবো ইন্টারন্যাশনালি কিছু বিষয় মাথায় রেখে স্কিপ্ট লেখার নিয়ম।

এর আগে আমরা দুটি ক্লাসে দেখলাম কিভাবে একটি সংবাদ স্যুটিং করতে হয় এবং কিভাবে সেটাকে চিত্রায়িত করতে হয়। আজকের লেসনে আমরা জানবো আপনার স্টোরিটা কিভাবে লিখতে হবে, আমাদের ভাষায় আমরা এটাকে বলি স্ক্রিপ্ট। মানে এখন আমরা আজিমপুরের গল্পটাকে একটি স্ক্রিপ্টে রুপ দেব।
গ্রাফিক্স লোগো ইন্ট্রো ৫ সেকেন্ড

কোন সংবাদ বা রিপোর্টের সঙ্গে অন্য যেকোন আর্টিকেল বা লেখার মুল প্রাথর্ক্য হলো, তথ্য সংগ্রহ ও লেখার ধরনে। সাংবাদিকরা রিপোর্ট লেখার জন্য কিছু কৌশল বা টেকনিক অনুসরন করে—সাক্ষাতকার গ্রহন, সরকারি বিভিন্ন ডকুমেন্ট বিশ্লেষন, পুরোনো বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষন, এবং বিভিন্ন ঘটনাবলীর বিশ্লেষন।
রিপোর্ট লেখার ক্ষেত্রেও কিছু টেকনিক ব্যবহার করতে হয়। কোন তথ্য আগে আসবে। কোন তথ্য উপাত্তের সঙ্গে কতটুকু জনসম্পৃত্ততা আছে, ইত্যাদি বিশেষ মাথায় রাখতে হয়।

একটি ভালো রিপোর্ট লেখার পুর্বশর্ত হচ্ছে, নির্ভুল তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন। রিপোর্টের বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখে প্রকৃত সত্য উদঘাটন ফ্যাক্টসগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে একজন সাংবাদিক, জনগনের প্রতিনিধি হয়ে উঠে।

News Values বা সংবাদযোগ্য ঘটনা
কোন ঘটনা কতটা সংবাদ হওয়ার যোগ্য, এটি নির্ধারন করার জন্য সাংবাদিকরা সাধারনত ৬ টি বিষয় বিবেচনা করে। এর মাধ্যমে তারা সিদ্ধান্ত নেয়,
• কোন তথ্য সবার আগে আসবে, এবং কোন সংবাদটি লিড হবে বা সবার উপরে থাকবে।
• কোন কোন সংবাদ পত্রিকার প্রথম পেজে, বা টেলিভিশনের প্রথম ধাপে থাকবে। এবং
• কোন সাক্ষাতকার গ্রহনের সময়, কি ধরনের প্রশ্ন করা উচিত।

বা ৬ টি মৌলিক বিষয় হলো……
১. টাইমলিনেস: সর্বশেষ ঘটনা, বা সর্বশেষ তথ্যের নিউজ ভেল্যু, তুলনামুলক আগের ঘটনার তুলনায় বেশি
২. প্রক্সিমিটি: কাছাকাছি স্থানের কোন ঘটনার নিউজ ভ্যালু, দুরবর্তী স্থানের কোন ঘটনার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়।
৩. প্রমিনেন্স: সর্বাধিক পরিচিত বা বিখ্যাত বা কোন পাবলিক ফেইসের নিউজ ভ্যালু সাধারন কোন মানুষের চেয়ে বেশি।
৪. ইউনিকনেস/ওডিটি: অকল্পনীয় বা অদ্ভুদ ধরনের ঘটনা, সেকোন সাধরন ঘটনার চেয়ে বেশি নিউজ ভ্যালু ক্যারি করে। ধরুর, কুকুরে মানুষকে কামড়িয়ে এটি একটি সাধারন ঘটনা, এবং এটা সংবাদ যোগ্য নয়। কিন্তু যদি মানুষ কুকুড়কে কামড়ায়, তবে তা অস্বাভাবিক ঘটনা এবং সংবাদ যোগ্য।

৫.ইমপ্যাক্ট: যে তথ্য বা ঘটনা যতবেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করবে, সে তথ্য বা ঘটনার সংবাদ হিসেবে সে ঘটনার গুরুত্ব তত বেশি।

৬. কনফ্লিক্টস: বলা হয়, ‘If it bleeds, it leads’ অর্থাত কো ঘটনা বা তথ্যের পক্ষে বিপক্ষে যত বেশি প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে, সে ঘটনা তত বেশি সংবাদ যোগ্য।
সংবাদ হিসেবে কোন ঘটনার গুরত্ব নির্ধারন করার জন্য সুনির্দিষ্ট কোন সুত্র না থাকলেও, এই ৬ টি ভ্যালুজ সিদ্ধন্ত নেওয়ার ক্ষেত্র্রে যথেষ্ট সাহায্য করে। বলা হয়, যেসব সংবাদ এই ৬ টি বিষয় উপস্থিত থাকে, সে সংবাদ তত ভালো।
Libel
সাংবাদিকতায় অহরহ Libel নামে একটি শব্দ ব্যবহার করা হয়, যার অর্থ কোন মিথ্যা বা বিভ্রান্তিমুলক তথ্য ব্যবহার করে কারও মানহানি বা ক্ষতি করা। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সবসময়ই সতর্ক থাকতে হয়। কারন, প্রায় সময়ই এরকম মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমুলক তথ্যের মধ্য দিয়েই তাদের যেতে হয়। এই মিথ্যা থেকে সত্যকে আলাদা করাতেই সাংবাদিকদের মুন্সিয়ানা।

যদিও বলা হয়, আমরা এখন স্বাধীন গণমাধ্যমের যুগে বাস করছি। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আমরা যা খুশি তাই লিখব। কারন কারও কোন ক্ষতি করার অধিকার সাংবাদিকদের দেওয়া হয়নি।

এই Libel থেকে মুক্ত থাকার অন্যতম সহজ উপায় হচ্ছে, তথ্যের গুনগম মান যাচাই করা। ধরুন আপনি কোন নিউজ লিখলেন, কিন্তু নিউজের তথ্য সম্বন্ধে আপনি নিশ্চিত না। তাহলে এটাকে যদি সত্য বলে ধরে নিয়ে আপনি লিখতে চান, তাহলে এ ক্ষেত্রে নিজেকেই জিজ্ঞেস করেন, আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন এটা সত্য। যে সোর্স থেকে আপনি এই তথ্য পেয়েছেন, সেই সোর্স কতটা নির্ভরযোগ্য। অন্যথায় মিথ্যা, বিভ্রান্তি, গুজব ইত্যাদি ছড়ানোর দায়ে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে কিন্তু মামলা খাওয়ার ঝুকি থাকে। এবং হচ্ছে ।

ইনট্রো: যাইহোক এবার আসি সংবাদ লিখবেন কিভাবে। কিভাবে তথ্যকে সাজাবেন। একটি সংবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হলো ইন্ট্রো বা সুচনা। এর মাধ্যমেই পুরো বার্তাটি সংক্ষেপে পাঠক দর্শকদের কাছে পৌছে দেওয়া হয়। অর্থাত সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন তথ্যটি এক প্যারায় তুলে ধরা হয়।

এ প্রসঙ্গে টেল এ ফ্রন্ড স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করা হয়। অর্থাত কোন ঘটনাকে এক ব্যাক্যে বন্ধুর কাছে প্রকাশ করতে আমরা যেভাবে কথা সাজাই, তাই ইন্ট্রো।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সাধারনত 5W 1H Formula ব্যবহার করা হয়। অর্থাত ইন্ট্রোতে ৬ টা প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই থাকতে হবে।

তা হলো, What, Who, When, Where, Why and How
রায়ের বাজার বস্তি থেকে উচ্চ শিক্ষা নিতে আমেরিকা যাচ্ছেন সিয়াম। ইউডাব্লিউসি-তে ২০১৯-২০ শিক্ষাবছরে ৮০ হাজার ডলার মূল্যের পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পড়তে এ মাসেই নিউ মেক্সিকো যাচ্ছেন তিনি।

What-কি? উচ্চ শিক্ষা নিতে আমেরিকা যাত্রা Who- কে যাচ্ছেন? সিয়াম
Where- কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছেন? রায়ের বাজার বস্তি থেকে আমেরিকা Why-কেন যাচ্ছেন? উচ্চ শিক্ষা নিতে When-কখোন? এ মাসেই How-কিভাবে? বৃত্তি নিয়ে
এবার আসি পুরো নিউজ কাঠামো কিভাবে সাজাবেন। যদি হার্ড নিউজ হয় (হার্ড নিউজ এবং সফট নিউজ সমন্ধে আগেই ধারনা দেওয়া হয়েছে) তাহলে এ ক্ষেত্রে উল্টো পিরামিড কাঠামো ব্যবহার করা হয়। অর্থাত উল্টো পিরামিডের মাথা থাকে বেশি প্রশস্ত বা ভারি। তেমনি হার্ড নিউজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভারি তথ্যগুলো সবার আগে বসে। যেটাকে আমরা ইন্ট্রো বলছি।

এরপরের প্যারাই আসবে সবচেয়ে গুরত্বপুর্ন ফ্যাক্টসগুলো। সবশেষে ব্যকগ্রাউন্ড ঘটনা বা তথ্য। নিউজ শেষ করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন ফর্মুলা নাই। তবে কোন তথ্য দিয়েই নিউজ শেষ করা ভালো।

Attributing information
নিউজে যেসব তথ্যের ব্যবহার করা হয়, সেসব তথ্যের উতস অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। না হলে সংবাদ বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। যেমন পুলিশের কোন ডকুমেন্টস, যে কোন অফিসের ডকুমেন্টস, কোন জরিপ, কোন ইন্টারভিউ ইত্যাদি। যদি কোন ইন্টারভিউয়ের কথা উল্লেখ করা হয়, তবে সাক্ষাতকার দাতার সরাসরি কোট করা ভালো।
উদাহরন:১. বিশ্বব্যাংক বলছে এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হবে না। বাংলাদেশ ইকোনোমিক আপডেট নামে বিশ্বব্যাংকের …তম সংখ্যায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
২. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৬০হাজার ছাড়িয়েছে।
নিউজে প্রথমবারের মত, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোট করা হলে, তাহলে তার পুরো নাম লিখতে হয়। পরের প্যারায় বা পরে একাধিকবার ব্যবহার করা হলে, সংক্ষিপ্ত নাম লিখলেই চলে।
যেমন Rohingya Relief and Repatriation Commissioner (RRRC) মো. আবুল কালাম বলেন, ২২ আগস্ট সব প্রস্তুতি থাকা সত্বেও কোন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
‘পুর্ন নাগরিকত্ব প্রদান এবং নিরাপত্বা নিশ্চিত না করলে, রোহিঙ্গারা ফেরত না যাওয়ার কথা জানিয়েছে’ কালাম জানান অথবা RRRC জানান

What's your reaction?

Excited
9
Happy
3
In Love
7
Not Sure
3
Silly
2

You may also like

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *