ডিজিটাল মিডিয়া বা টেলিভিশনে একজন ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক হতে হলে রিপোর্টার, উপস্থাপনা, সম্পাদক, ভিডিওগ্রাফার বা ফটোগ্রাফার, চিত্র-সম্পাদক, লাইভ রিপোটিং বিষয়গুলো আপনাকে একাই পারদর্শি হতে হবে, যদি পুরোটা পারদর্শি হতে নাও পারেন তবুও কিছুটা আপনাকে জানতেই হবে। বিস্তারিত জানার আগে এই ক্লাসে আমরা প্রতিটি বিষয়ে সর্ম্পকে অল্প করে জেনে নেব।
মুলধারার সংবাদ মাধ্যম বা টেলিভিশন চ্যানেলে একটি সংবাদের পেছনে সাত থেকে আট জন লোক কাজ করেন। ধরুন, একজন রিপোর্টারের সঙ্গে থাকেন একজন ক্যামেরা পারসন। রিপোর্টারের চাহিদা এবং নিজের দক্ষতা ব্যবহার করে তিনি ভিডিও করেন। ফিল্ডে কাজ শেষ হলে, রিপোর্টার যে স্ক্রিপ্টটি লেখেন, একজন সম্পাদক তা যাছাই-বাছাই করে নির্ভুল করে তোলেন। পাশাপাশি তিনি অত্যান্ত দক্ষতার সঙ্গে এটা সব শ্রেণি পেশার মানুষের বোধগম্য করে তোলেন। এরপর একজন ভিডিও সম্পাদক, স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী ভিডিং সংবাদ তৈরি করেন। সেই সংবাদ আবর যায় একজন প্রযোজকের হাতে। সবশেষ একজন উপস্থাপক তা দর্শকের সামনে উপস্থাপন করেন।
রিপোর্টিং: সাংবাদিকতা হচ্ছে কোন সংবাদযোগ্য ঘটনা বা তথ্যের বিস্তারিত বিষয় কোন মাধ্যমে জনগনের কাছে প্রকাশ করা। তাই আপনাকে প্রথমেই সংবাদ খুজে নিতে হবে। শুধুই জনগনকে নতুন কোন তথ্য জানালেই হবে না সে তথ্য আপনাকে দর্শনযোগ্য করে তুলতে হবে, সংবাদটি হতে হবে নিরাপেক্ষ এবং নিভুল। ঘটনাস্থলে আপনি যদি আপনার সাথে কোন ভিডিও র্জানালিস্ট বা ফটোগ্রাফার নিয়ে যান তাহলে তার সাথে আপনার সংবাদের আইডিয়া শেয়ার করুন। এবং তাকে গ্রামার মেনে কাজ করতে অনুরোধ করুন। প্রতিবেদন লেখার সময় খেয়াল রাখতে হবে ভাষা, আপনার ভাষাটি সহজ ও সরল ভাষা হতে হবে।
ভিডিওগ্রাফার বা ফটোগ্রাফার: আপনি যদি একজন নগর সাংবাদিক হতে চান তাহলে ভিডিওগ্রাফার বা ফটোগ্রাফার আপনাকেই করতে হবে। নতুবা আলাদা ভিডিওগ্রাফার বা ফটোগ্রাফার নিলেও তাদের বেসিক কিছু গ্রামার ফলো করতে হবে। প্রথমেই আপনাকে জেনে নিতে হবে সংবাদটা কোন ধরনের হবে। যদি সংবাদটি ভিডিও দিয়ে তুলে ধরতে চান তাহলে ঘটনাটির ধারাবাহিকতা ধরতে হবে। এবং ধারাবাহিক ভাবে সটগুলো নিতে হবে। সিকোয়েন্সের হিসেবে আপনাকে ভিডিও করে নিতে হবে, যাতে চিত্র সম্পাদক প্রতিটা সিকোয়েন্স কাজে লাগিয়ে গল্প বা সংবাদটি তুলে ধরতে পারেন। ফটোগ্রাফারের ক্ষেত্রেও একই ভাবে শুরু থেকেই গল্পের মত করে সংবাদটি সাজিয়ে নিতে হবে। এবং কাজ করার সময় অবশ্যই আপনার নিজের নিরাপত্তা মাথায় রাখতে হবে।
সম্পাদক: সম্পাদকের দায়িত্ব সংবাদটি সর্ম্পকে রির্পোটারকে গাইড লাইন দেয়া, সংবাদটির ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলোকে ফোকাস করতে হবে সেটও দেখার দায়িত্ব একজন সম্পাদকের। আর সব থেকে বর দায়িত্ব কোন ভুল তথ্য প্রচার হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজর রাখা। এর সাথে ভাষাগত দিক থেকে সম্পাদক তার দক্ষতা দিয়ে সংবাদটি সব শ্রেণি পেশার মানুষের বোধগম্য করে তোলেন। তাই আপনি যদি একজন নাগরিক সাংবাদিক হন তাহলে এই বিষয়টি আপনাকে নিজেকেই বুঝতে হবে এবং বিষয়টি পালন কতে হবে।
চিত্র সম্পাদক: চিত্র সম্পাদকের কাজ ভিডিও সম্পাদনা করা। ভিডিওগ্রাফার যে ভিডিওগুলো এনেছেন সেগুলোকে রিপোর্টারের ভয়েজের সাথে মিলিয়ে সুন্দর করে এডিট করবেন একজন চিত্র সম্পাদক। তবে তার মানতে ভিডিওগ্রাফির বেশ কিছু গ্রামার এবং সাংবাদিকতার কিছু নৈতিকতা। যদি গ্রামার সর্ম্পকে বলি তাহলে সিকোয়েন্স মেইনটেইন, সট ডিভিশন ইত্যাদি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আর যদি সাংবাদিকতার নৈতিকতা নিয়ে বলি তাহলে কোন ধর্ষিত নারী ছবি ব্লার করে দিতে হবে, কোন রক্ত বা লাশের ছবি দেয়া যাবে না। চিত্র সম্পাদককে শিখতে হবে এডিটিং সফ্টওয়ার । এক্ষেত্রে আপনি প্রফেশনাল এডিটিং সফ্টওয়ার হিসেবে এডোবি প্রিমিয়ার প্রো, ফাইনাল কাট প্রো শিখতে পারেন অথবা হোম ইউজার হিসেবে ফ্লিমমোরা বা ক্যামতেশিয়া জানতে হবে।
উপস্থাপনা: আপনি ডিজিটাল মিডিয়া বা টেলিভিশনে সাংকাদিকতা করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই উপস্থাপনা বেসিক বিষয়গুলো জানতে হবে এবং ফলো করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে জানতে হবে উচ্চারন, ভয়েজ মডিউলেশন, বেশ কিছু অঙ্গভঙ্গি, কোন পরিবেশে আপনার কি আপনার পোষাক পরতে হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো আপনাকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর যদি আপনাকে কোন লাইভ সংবাদ উপস্থাপনা করতে হয় তাহলে আরো অনেক বিষয় মাথায় রেখে কাজটি করতে হবে।
কিন্তু আপনি যখন একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, তখন এসব কিছুই আপনাকে একা করতে হবে। অর্থাত রিপোর্টের আইডিয়া থেকে শুরু করে প্রচার হওয়া পর্যন্ত সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনার। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি সার্বক্ষনিক পেশা হিসেবে নেন, তবে সাথে আলাদা চিত্রগ্রাহক, ভিডিও এডিটর রাখতে পারেন। কিন্তু তা বেশ ব্যয় সাধ্য। তাই রিপোর্টের পাশাপাশি আপনাকে শিখতে হবে কিভাবে ভিডিও করতে হয়, কিভাবে ভিডিও এডিটিং করতে হয়। শিখতে হবে উপস্থাপনা ।