লেন্স এক ধরনের স্বচ্ছ মাধ্যম যার মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণ ঘটে। একটি অথবা উভয় আবরণ একদিক থেকে আলো সংগ্রহ করে এর অভিসরণ পরিবর্তন করে অন্যদিকে প্রতিফলন করে।
লেন্স আলোর মিলিত (converge) ও আলাদা (diverge) হওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। একটি কনভার্জিং লেন্স লাইট গ্রহণ করে একটি ছোট পয়েন্ট টার্গেট করে (যেমন: চোখ)। কনভার্জিং লেন্স একটি ছোট উৎস থেকে আলো নিয়ে বাইরে নিক্ষেপ করে (যেমন: স্ক্রিন প্রজেক্টার)।
বেশিরভাগ লেন্সের গোলাকার আবরণ আছে। এটি আদর্শ আকার না হলেও উৎপাদন করতে এর সুবিধা রয়েছে। বাইরের দিকের বাঁকা আবরণ হচ্ছে কনভেক্স। আর ভেতরের আবরণের নাম কনকেভ, আর সমতল আবরণ হচ্ছে প্ল্যানার।
ক্যামেরা লেন্স আলো সংগ্রহ করে তা একটি কেন্দ্রবিন্দুতে যেমন ফিল্ম অথবা সিসিডিতে নিক্ষেপ করে। বেশিরভাগ লেন্সই একাধিক কাজ করে থাকে। তার মানে দুই বা ততোধিক লেন্সের একই অক্ষ থাকে।
টার্ম লেন্স ইলেকট্রমেগনেটিক কনভার্জিং পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। উদাহরণসরূপ: মাইক্রোওয়েভ লেন্স, গ্র্যাভিটেশনাল লেন্স।
এসএলআর অর্থাৎ সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেকসন ক্যামেরার প্রধান সুবিধা হচ্ছে এর লেন্স বদল করা যায়। লেন্স বিভিন্ন ধরনের ও আকারের পাওয়া যায় যা দিয়ে ফটোগ্রাফার তার পছন্দমতো ছবি তোলার সুযোগ পায়। ফোকাল ল্যান্থ (ক্যামেরা থেকে বিষয়ের দুরুত্ব) লেন্সের ক্ষেত্রে অন্যতম বিবেচ্য বিষয়, এর সাথে সাটার স্পিড (লেন্সের চোখ খোলার গতি) ও অ্যাপার্চার (লেন্সের পরিধি) লেন্সের জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ।
অনেক ফটোগ্রাফারই লেন্স কেনার সময় মনে করে এটি বেশ ঝামেলাপূর্ণ। কিন্তু প্রতিটি লেন্সের বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার পর ব্যাপারটি অনেক সহজ। লেন্স কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোন ধরনের ফটোগ্রাফি আপনি পছন্দ করেন, কোনো বিষয়ের উপর ফটোগ্রাফি করতে চান। উদাহরণসরূপ একজন ল্যান্ডস্ক্যাপ ফটোগ্রাফার ওয়াইড অ্যাঙ্গেল বা প্রাইম লেন্স ব্যবহার করলে বেশি উপকৃত হবে। স্পোর্টস ফটোগ্রাফারের দরকার জুম লেন্স যার মাধ্যমে ফটোর বৃহত্তিকরণ ও অটো ফোকাস সম্ভব।
জুম লেন্স অধিক নমনীয়, বেশিরভাগ আধুনিক এসএলআর ক্যামেরায় মানসম্পন্ন জুম রয়েছে। আর প্রাইম লেন্সের ৩৫ মি.মি ও ৫০ মি.মি ফোকাল ল্যান্থের বিশেষ সুবিধা রয়েছে। প্রাইম লেন্সগুলো অধিক শার্প এবং এতে সাধারণত ওয়াইড অ্যাপর্চার আছে। এই লেন্সগুলো পোর্টেট ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ। ওয়াইড অ্যাপর্চার হলো যার সাহায্যে ড্যাপ্ট অব ফিল্ড (কাছের ও দূরের বিষয়ের মধ্যে দুরত্বের পার্থক্য) ব্যবহার করে ছবির প্রতিটি বিষয় আলাদা করা সম্ভব। প্রাইম লেন্সের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন দৃষ্টি ও কম আলোয় কাজ করার বৈশিষ্ট্যর জন্য ল্যান্ডস্ক্যাপ ফটোগ্রাফির জন্যও এটি অসাধারণ।
‘সুপারজুম’ লেন্স অনেক সুবিধা দেয় এবং ১৮ মি.মি থেকে ২০০ মি.মি ফোকাল ল্যান্থ কভার করে। সুপারজুম বেশ ভালো যদি আপনি লাইটের কাজ করেন এবং লেন্স পরিবর্তনের কারণে যদি কোনো শট মিস করেন। গত কয়েকবছরে সুপারজুমের মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, আগের চেয়ে অনেক বেশি সার্পার ও লাইটার।
টেলিফটো লেন্স স্পোর্টস ও প্রাকৃতিক ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ। এটি নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে বিষয় কাছে আনতে সাহায্য করে। টেলিফটো লেন্স সাধারণত ৭৫ মি.মি থেকে ৩০০ মি.মি পর্যন্ত ফোকাল ল্যন্থ অফার করে। এর ব্যাপকতার কারণে ও সার্প ছবি পাওয়ার জন্য টেলিফটো লেন্স ব্যবহারের সময় ট্রাইপড (ক্যামেরা রাখার স্ট্যান্ড) ব্যবহার করা ভালো। আধুনিক লেন্সগুলোতে অপটিক্যাল স্ট্যাবিলিটি থাকে, এর ফলে ছবি তোলার সময় ক্যামেরার ঝাঁকি কম হয়।
ম্যাক্রো লেন্স কাছের ছবি তোলার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। একটি যথার্থ ম্যাক্রো লেন্স ‘ফ্যাম-ফিলিং’ ছবি তুলতে পারে যা ক্যামেরার সেন্সরের সাইজের সমান। ম্যাক্রো লেন্স উয়াইড অ্যাপারর্চারের সাথে দারুন নমনীয়তা দেয় যা সাধারণ ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই লেন্সে ছবি তোলার সময় ফোকাল করা কঠিন হলে ট্রাইপড ব্যবহার করে ম্যানুয়াল ফোকাস সেট করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল এবং অন্যান্য বিশেষায়িত লেন্সে দারুন ছবি তোলা যায় কিন্তু এদের দাম অনেক বেশি। ফিশ আই লেন্স বেশ ভালো কোয়ালিটির ছবি পাওয়া যায়। তবে অনেক দাম দিয়ে লেন্স কেনার আগে ভাবতে হবে কি কাজে আপনি এটা ব্যবহার করবেন। ফটো এডিটিং সফটোয়্যারের মাধ্যমে স্পেশাল লেন্স ইফেক্টগুলা নকল করা সম্ভব এবং বিভিন্ন প্রযুক্তির সাথে এক্সপেরিয়্যান্স করার জন্য এটি একটি বিশেষ দিক।
লিখেছেন: অনিন্দিতা নাহীন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার”