Photography

ফটোগ্রাফী হচ্ছে আলো দিয়ে আঁকা

ফটোগ্রাফী হচ্ছে আলো দিয়ে আঁকা

ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার পর মানুষের হাতে হাতে ক্যামেরা পৌঁছে গেছে। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের উন্নতির ফলে ক্যামেরা নিজেই অনেক দৃষ্টিনন্দন ছবি তুলতে পারছে। অনেকটাই হারিয়েছে ছবি প্রিন্টের প্রয়োজনিয়তা। ক্যামেরা থেকে ডিজিটাল ইমেজ সরাসরি চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ওয়েব সাইট আর সোস্যাল নেটওয়ার্কে। ক্যামেরা যুক্ত হয়েছে মোবাইল ফোনের সাথে। প্রায় সমস্ত ডিজিটাল ক্যামেরাতেই যুক্ত হয়েছে ভিডিও প্রযুক্তি। এই সবকিছু ফটোগ্রাফির কতটা উন্নতি ঘটিয়েছে তা বলা মুশকিল। কিন্তু মাধ্যমটিকে জনমানুষের অনেক কাছে নিয়ে এসেছে। তাই মোটামুটি একটা ডিএসএলআর এখন তরুণদের হাতের মুঠোয়। তবে তার কতটা ফটোগ্রাফি সাধনার জন্য আর কতটা সঙ্গিনীকে আকর্ষিত করার জন্য তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। আমাদের চেষ্টা প্রকৃতই যারা ফটোগ্রাফার সাধনা করতে চায় তাদের পথ দেখানো।
ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে? ডিএসএলআর কি? কোন লেন্স কেন ব্যবহার করবো? এমন হাজারো প্রশ্নের আগে নিজের কাছে প্রশ্ন করা দরকার কেন ফটোগ্রাফি করবো? কার জন্য ফটোগ্রাফি করবো? আমার কি লাভ? অন্যদের কি লাভ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা না থাকলে শুধু ফটোগ্রাফির অথৈ জলে হাবুডুবু খাওয়া হবে, নুড়ি বা মুক্তো কিছুই জমা হবে না।
প্রসঙ্গে আসা যাক, যুগে যুগে মানুষ শিল্পচর্চা করে এসেছে প্রথমত: শিল্পীর নিজের বিনোদনের জন্য। দ্বিতীয়ত: শিল্পীর আদর্শ বা বক্তব্যকে প্রচারের জন্য। তৃতীয়ত: মানুষের অনুভূতি বা সংবেদনশীলতাকে নাড়া দেয়ার জন্য। চতুর্থত: সভ্যতার বিকাশে ভূমিকা রাখার জন্য এবং সবশেষে: ভোক্তাকে আনন্দ দেয়ার জন্য। অনেক শিল্পমাধ্যমের একটি ফটোগ্রাফি বা আলোকচিত্র। কাগজে লেখা সবকিছুই যেমন সাহিত্য নয় ক্যামেরায় ছবি তুললেই তা ফটোগ্রাফি হয় না। কোনও ছবি ফটোগ্রাফি হয়ে ওঠার জন্য উপরের পাঁচটি শর্তই পূরণ করতে হয়।
একজন চিত্রশিল্পী প্রথম মনের চোখে ছবিটি দেখতে পায়। তারপর তা ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলে। তার মাঝ তিনি সিদ্ধান্ত নেন দর্শকের কাছে কি বক্তব্য দিতে চান এবং এতে দর্শকের প্রতিক্রিয়া কি হবে। আলোকচিত্রও তেমনি। একটা সুন্দর দৃশ্য দেখলাম সাথে সাথে ক্লিক করলাম। এভাবে ফটোগ্রাফির সাধনা হবে না। দৃশ্যটি আগে মনের চোখে দেখতে হবে। কেন এই দৃশ্যটি আমি দেখাতে চাই এবং এর মাধ্যমে দর্শকের কাছ থেকে কি প্রতিক্রিয়া আশা করি তা নিজের কাছে পরিস্কার হতে হবে। যেকোন শিল্প বা সাহিত্য চর্চার উদ্দেশ্য এক, কিন্তু উপস্থাপনের ভিন্নতায় দর্শকের প্রতিক্রিয়ায় ভিন্নতা পাওয়া যায়। আবার সব মাধ্যমেরই কিছু শক্তিশালী এবং কিছু দূর্বল দিক আছে। শিল্পচর্চার মাধ্যম হিসাবে ফটোগ্রাফিকে তখনই নেয়া উচিত যখন এর দূর্বলতাকে পাশ কাটিয়ে শক্তির ব্যবহার ঘটিয়ে কাঙ্খিত বক্তব্যকে দর্শকের যথার্থ প্রতিক্রিয়ায় হাজির করার ক্ষেত্রে নিজের সামর্থের প্রতি আস্থাশীল হতে পারবো।
সঙ্গীত চর্চার জন্য যেমন তাল, লয় ও সুর জানতে হয়। ফটোগ্রাফি চর্চার জন্যও কিছু কারিগরী এবং কিছু নন্দনতাত্ত্বিক বিষয় জানার প্রয়োজন আছে। কিন্তু নিয়মগুলো মানার বিষয়টি শিল্পীর সৃষ্টিশীলতার উপর নির্ভর করে। আবার কোন রকম কারিগরী বা নান্দনিক জ্ঞান আহরণ ছাড়াই সহজাত শিল্পী মাধ্যমকে অনন্য ভঙ্গিমায় ব্যবহার করতে পারেন। তাই শিল্পের কোনও নিয়ম নেই, শিল্পীর কোনও গ-ি নেই। একমাত্র বিবেচ্য বিষয় শিল্প/ শিল্পীর সফলতা বা ব্যার্থতা। আবার সময়ের বিচারে এই সফলতা বা ব্যার্থতার হিসাব উল্টে যেতে পারে যুগে যুগে নানা শিল্প মাধ্যমে আমরা এরকম অনেক উদাহরণ পেয়েছি।
প্রথাগত আলোকচিত্র সাধনায় কি জানতে হবে? কিছুটা আলোক বিজ্ঞান, কিছুটা যন্ত্রকৌশল, আর কিছুটা রসায়ন। ডিজিটাল আসার পর ইলেক্ট্রনিক্সটা লাগছেই, কম্পিউটারটাও একটু না বুঝলে চলছেই না। এই সবকিছু জানলেও লাভ নেই, যদি শিল্পটাকে না বুঝি, যদি নন্দনতত্ত্ব না বুঝি, যদি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি না হয়, যদি সমাজ সচেতনতা তৈরি না হয়। আবার এইগুলো তৈরি হবেনা যদি সাহিত্যের সাথে যোগাযোগ না থাকে, যদি সঙ্গীত ভালো না বাসি, যদি মানুষকে ভালোবাসতে না জানি। সৃষ্টি রহস্য বুঝি, উদ্দেশ্য বুঝি, প্রকৃতির প্রতিটি বস্তুর সাথে বস্তুর সম্পর্ককে বুঝি, প্রতিটি জীবের সাথে জীবের প্রেমকে বুঝি – শিল্প তৈরি হতে বাধ্য তা যে মাধ্যমেই হোক না কেন।
ক্যামেরা কি?
আলো দিয়ে ছবি আঁকার পদ্ধতি। ইতিহাস খুললে দেখা যায়। সম্ভ্রান্ত লোকজন নিজেদের পোর্ট্রেট (অনুলিপি) আরও বেশি বাস্তবধর্মী করার জন্য আলোকচিত্র গবেষণায় মনোনিবেশ করেছিলো।

লেন্স কি?
আলো দিয়ে ছবি আঁকার জন্য আবশ্যক দুটি বিষয় হচ্ছে অন্ধকার কক্ষ এবং নিয়ন্ত্রিত আলো প্রবেশের রাস্তা। এই নিয়ন্ত্রিত আলো প্রবেশের রাস্তাটিই হচ্ছে লেন্স। সাধারণত দুই ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যুক্ত থাকে। ‘অ্যাপারচার’ এবং ‘সাটার স্পীড’।

অ্যাপারচার কি?
এক ধরনের আলোক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। গোলাকার একটি দরজা যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ছোট বা বড় করা যায়। দরজাটি ছোট করলে কম আলো প্রবেশ করতে পারবে। দরজাটি বড় করলে বেশি আলো প্রবেশ করতে পারবে।
সাটার স্পীড?
দোকানের সাটার (দোকানের সামনের দরজা) যেভাবে খোলে বা বন্ধ হয়, একই পদ্ধতিতে আলো নিয়ন্ত্রণের আর একটি ব্যবস্থা। সাটার খোলা আলোকচিত্রীর ক্লিক এর উপর নির্ভর করে কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পর সাটারটি নিজেই বন্ধ হয়ে যায়। এই নির্দিষ্ট সময়টিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সাটার স্পীড এর মাধ্যমে। সাটারটি বেশি সময় খোলা থাকলে বেশী আলো প্রবেশ করবে। কম সময় খোলা থাকলে কম আলো প্রবেশ করবে।

ছবি আঁকা হবে কোথায়?
অন্ধকার কক্ষের শেষ মাথায় আলোক সংবেদনশীল মাধ্যম রাখা হয়। সেখানেই ছবি তৈরী হয়। আগে এক্ষেত্রে নেগেটিভ ব্যবহৃত হতো। এখন সেই জায়গাটি নিয়ে নিয়েছে সিসিডি/ সিমস (আলোক সংবেদনশীল তড়িৎ উৎপাদক)। লেন্সের মাধ্যমে তৈরি সমস্ত ইমেজই উল্টোভাবে তৈরি হয়। আমাদের চোখ আর ক্যামেরার গঠনরীতি প্রায় একই। কাজেই ক্যামেরাকে বোঝার জন্য চোখের গঠনপ্রনালী বা ইমেজ তৈরির প্রক্রিয়া বোঝা দরকার। সেই আলোচনা তোলা থাকলো অন্য দিনের জন্য।

মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন
সিনিয়র লেকচারার, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ

What's your reaction?

Excited
0
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0

You may also like

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More in:Photography

Learn Photography in Bangla - ক্লিক এন টেক Photography

Learn Photography in Bangla

Learn Photography in Bangla ফটোগ্রফি এক ধরনের শিল্প তার সাথে রয়েছে বিজ্ঞানের ছোয়া এই দুই ...