সম্পাদনা (দৃষ্টিকোন – ভিডিও সম্পাদনা )
ভিডিও সম্পাদনা একটি দৃষ্টি সংক্রান্ত শিল্প। অনেকটা ফুলের তোড়া বানানোর মতো। বেছে নেয়া বিভিন্ন ধরনের ফুল, চমৎকার কিছু পাতা, একটি ঝকঝকে ঝুড়ি তারপর এসবগুলোর নিজ নিজ সৌন্দর্য্য ধরে রেখে আরো সুন্দর করে তোলা। যদিও আমরা কখনোই ভাবিনা কে ফুলের তোড়াটা বানিয়েছে কিন্তু তোড়াটা ভাল হয়েছে সেটা বলি।
চলচ্চিত্র, নাটক, মিউজিক ভিডিও, তথ্য চিত্র, সংবাদ, টেলিভিশন বিজ্ঞাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভিডিও সম্পাদনার প্রয়োজন পড়ে থাকে। তবে এর বহুবিধ ব্যবহারের প্রসার ঘটছে দিন দিন। আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে এটি হয়েছে অনেকটা সহজ। তবে প্রযুক্তি বলুন আর শিল্পই বলুন দর্শক যদি না বোঝেন আর টেলিভিশনের পর্দায় যদি দর্শকের চোখ বেঁধে রাখা না যায়, তবে সব কষ্টই বৃথা। আমরা যে লক্ষ্য নিয়েই প্রোডাকশন বানাই না কেন, সবকিছু শেষ মূল্যায়নের দায়িত্ব দর্শকের। কারন তারা যথেষ্ট বোদ্ধা। যদিও তারা পরিচালক নয়, চিত্রগ্রাহক নয় আবার সম্পাদনাও বোঝে না কিন্তু দুই লাইনেই বলে দেবে “ভাল হয়েছে” বা “এটা কিছু হলো?”
এবার চলুন ভিডিও সম্পাদনার প্রাণকোষ নিয়ে আলোচনা শুরু করি। যুক্তি, বাস্তবতা, ধারাবাহিকতা এবং শিল্প হচ্ছে এর প্রধান অঙ্গ। যদিও বিভিন্ন সময় সম্পাদনার ধরন অনেকটা পাল্টে যায়। কিছু ক্ষেত্রে যুক্তির প্রয়োজন হয় আবার কিছু ক্ষেত্রে যুক্তিকে দূরে রাখাই ভালো। ধারাবাহিকতা ছাড়া কাহিনী হবে এলোমেলো, আবার বাস্তবতা ছাড়া বিশ্বাসযোগ্যতা পাওয়া যাবে না। সব মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।
এগুলো যে শুধু সম্পাদকেরই দায়িত্ব, তা নয়। পরিচালকই প্রধান, তিনি একটা স্বপ্নের জন্ম দেবেন এবং সম্পূর্ণ বিষয়টা একে একে গুছিয়ে নিয়ে আসবেন। নাট্যকার চিত্রনাট্য তৈরি করবেন দর্শকের চাহিদার কথা ভেবে। শিল্পী চরিত্রকে ধারন করবে গল্পের খুব ভেতরে ডুকে। চিত্রগ্রাহক ছবিগুলো আলো দিয়ে আঁকবেন। এর সঙ্গে লাইট, সাউন্ড, মেকাপ এক কথায় দলের প্রতিটা মানুষ নিজ নিজ কাজকে শিল্পে রূপ দেবেন। শিল্প নির্দেশক অগোছালো শিল্পগুলোকে নিখুঁত করে তুলবেন। সঙ্গীত পরিচালক গল্পের ধরন বুঝে সঙ্গীত নির্বাচন করবেন। সম্পাদক ছবিগুলো মালার মত করে গাঁথবেন, আলো ছায়ায় দেবেন প্রান, শব্দগুলোকে করবেন শ্রতিমধুর, এভাবেই পরিচালকের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করবেন। সফল হবে পুরো দলের পরিশ্রম।
ভিডিও সম্পাদনা প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ঘটছে দিনে দিনে। নতুন প্রযুক্তি প্রোডাকশনের একটি অংশের ব্যাপক মান উন্নয়ন ঘটাবে। তবে যদি আমরা ভাবি শুধু প্রযুক্তি ও এডিটিং সফটওয়্যার বা ভাল কোন ক্যামেরা জানলেই প্রোডাকশন ভাল হবে, সেটা ভুল। মূল হচ্ছে গল্প ও পরিচালক সহ পুর দলটির চেষ্টা, ভাবনা ও মেধা । গল্পের চরিত্রগুলো দর্শককে এতোটাই প্রভাবিত করবে যে, দর্শকের বাস্তব জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়াবে চরিত্রগুলো। তখন ফেলুদার পাশে বসে দর্শক চা খাবেন। ঢাকার রাস্তায় বাকের ভাইয়ের জন্য আবারও মিছিল হবে।
অনেক সময় পরিচালকের সঙ্গে সম্পাদকের মতের মিল নাও হতে পারে। তখন সম্পাদকের দায়িত্ব তার যুক্তি তুলে ধরা। যদি তার যুক্তিতে জোর থাকে পরিচালক তাতে মত দেবেন। কারণ একটি প্রোডাকশন পরিচালকের সন্তানের মতো, সে নিশ্চয়ই তার সন্তানের ক্ষতি চাইবেন না। আবার বিষয়টা উল্টাও ঘটতে পারে সেক্ষেত্রেও সম্পর্কের বাঁধনটা একই রকম।
একজন সম্পাদকের থাকতে হবে অফুরন্ত ধৈর্য, হাজারো ভুলকে সংশোধন করার। বাড়াতে হবে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। খুঁজে বের করতে হবে খুঁটিনাটি। নিজের কাজকে ভালবাসতে হবে এবং উপভোগ করতে হবে। দেশি-বিদেশি সিনেমা, নাটক এবং বিভিন্ন টেলিভিশন দেখতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে থাকতে হবে। আলোচনা করতে হবে সেগুলো নিয়ে।
এই লেখাটিতে আমি কোন টেকনিক্যাল ভাষা ব্যবহার করছি না। চাচ্ছি সর্ব-সাধারনের গ্রহণযোগ্যতা। তবে ধীরে ধীরে আমরা সব কিছু নিয়েই অলোচনা করবো। আমার কর্মজীবনে আমি বেশ কিছু মানুষ পেয়েছিলাম যারা আমাকে দীক্ষা দিয়েছেন নিঃস্বার্থ ভাবে। সেই দীক্ষার সাথে কিছু বই আর ইন্টারনেট থেকেও শিখেছি। সব মনে রাখতে পারিনি। এতো কিছু ভুলে যাবার পর যা মনে আছে তাই আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। আমার এই লেখার সাথে আপনাদের ভাবনা এবং লেখা সংযুক্ত করে clickntech.com কে আরো সমৃদ্ধ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
আলী আহমেদ নেমান